আজকে আমরা জানবো চোখের গঠন ও কাজ সম্পর্কীয় যাবতীয় তথ্য যার মাধ্যমে আমরা আমাদের এই সুন্দর পৃথীবি কে দেখতে পারি এবং এর সৌন্দর্য্য টাকে উপলব্দি করতে পারি।
চোখ:
যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীজগত পরিবেশ থেকে আগত আলো ও উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বাইরের জগতের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পায় তাকে চোখ বলে।
চোখের গঠন ও কাজ
চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়, যার মাধ্যমে আমরা নানান কিছু দেখি এবং উপভোগ করি । আমাদের চোখ মূলত মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে্র মধ্যে অবস্থিত। প্রতিটি চোখ:
-একটি অক্ষিগোলক
-একজোড়া অক্ষিপল্লব
– একটি অশ্রুগ্রন্থি নিয়ে গঠিত ।

অক্ষিগোলক:
চোখের অক্ষিগোলকের প্রধান অংশগুলি হল:
১.কনজাংটিভা
২. কর্নিয়া
৩. আইরিশ
৪. লেন্স বা মনি
৫. স্কলেরা
৬. কোরয়েড
৭. রেটিনা
মানবদেহের হরমোন গুলো কি কি এবং এদের কাজ কি?
১. কনজাংটিভা:
কনজাংটিভা এর অবস্থান অক্ষিগোলকের একেবারে বাইরের দিকে এবং এটি এক ধরনের পাতলা আবরণ।
কাজ:
কনজাংটিভা এর কাজ হলো চোখের ভিতরের দিকের অংশকে এর সামনের যে কোন আক্রমন থেকে রক্ষা করা এবং অক্ষত রাখা।
২. কর্নিয়া:
কর্ণিয়া অক্ষিগোলকের ঠিক সম্মুখ ভাগে অবস্থিত এবং এটি একটি স্বচ্ছ স্তর৷
কাজঃ
এটি প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং আলোকরশ্মি কে কেন্দ্রীভূত করে রাখে।
৩. আইরিশ:
আইরিশ অক্ষিগোলকের ঠিক সম্মুখ ভাগে অবস্থান করে।
কাজ:
তারারন্ধ্রকে সংকোচিত ও প্রসারিত হতে সাহায্য করে থাকে এই আইরিশ।
৪. লেন্স:
লেন্স এর অবস্থান আইরিশের পশ্চাৎ ভাগে ।
কাজ:
আলোর প্রতিসরণ ঘটাতে সাহায্য করে ও আলোকরশ্মি কে রেটিনার উপরে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে থাকে এই লেন্স।
৫. কোরয়েড:
এটি অক্ষিগোলকের পেছনের অংশজুড়ে অবস্থিত এবং এটি বাইরের একটি আবরণ এবং এটি শ্বেতমন্ডলের পরবর্তী একটি আবরণ। এই অংশে মেলানিন থাকায় এটি কালো রঙ ধারণ করে।
কাজ:
কোরয়েড এর প্রধান কাজ হলো চোখের ভিতরের অংশ গুলো কে যেকোনো আঘাত থেকে রক্ষা করে রাখা। এটি কালো আলোর প্রতিফলন রোধ করে এবং রেটিনাকে রক্ষা করে।
৬. রেটিনা:
রেটিনা অক্ষিপট এর ঠিক পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত। এটি কোরয়েড এর পরবর্তী একটি স্নায়ু স্তর। এটি মূলত ২টি স্নায়ুকোষ নিয়ে গঠিত।যথাঃ
– রড কোষ ও
-কোণ কোষ
কাজ:
এর কাজ হলো বস্তুর অবয়ব বা প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করা। রড কোষ ও কোণ কোষ আলো ও বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে এবং এরা অধিক বা উজ্জ্বল আলোয় সংবেদনশীল।
অক্ষিপল্লব:
চোখ দুটি সঞ্চারশীল একটি ঊর্ধপল্লব ও একটি নিম্নপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে । অক্ষিপল্লবের কিনারার দিকে এক সারি পল্লব বা লোম [eye lash] থাকে ।
অক্ষিপল্লবের কাজঃ
বাইরের আঘাত ও ধুলাবালির হাত থেকে আমাদের চোখ কে রক্ষা করে এই অক্ষিপল্লব।
অশ্রুগ্রন্থি:
প্রতিটি চোখের অক্ষিকোটরের বাইরে এবং উপরের অক্ষিপল্লবের নীচে ছোটো বাদামের ন্যায় দেখতে একটি করে অশ্রুগ্রন্থি থাকে । অশ্রুগ্রন্থির যে ক্ষরণ তাকেই অশ্রু [tear] বলে ।
কাজ:
অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ নালি পথে প্রবাহমান হয়ে কনজাংটিভার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখকে ভিজা রাখতে সাহায্য করে । অশ্রু চোখের উপরিভাগে কোনো ধুলোবালি পড়লে তা ধুয়ে দেয় ।এছাড়া অশ্রুতে অবস্থিত সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক পদার্থ হিসেবেও কাজ করে থাকে।
চোখ এর উপযোজন ক্ষমতাঃ
কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, চক্ষু লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমার একত্রে একটি অভিসারী লেন্স হিসেবে কাজ করে। এরা একসাথে মিলিত ভাবে চোখের লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করে এবং বিভিন্ন দূরত্বের বস্তু দেখতে সহায়তা করে। চোখের লেন্সের যে ফোকাস দূরত্ব তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকেই উপযোজন ক্ষমতা বলে।
স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্বঃ
যে নিকটতম দূরত্বে চোখ স্পষ্ট দেখতে পায় তাই তার স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব। স্বাভাবিক চোখের ক্ষেত্রে স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব ২৫ সে.মি হয়ে থাকে।
দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকালঃ
কোন একটি বস্তুকে যদি চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তারপরও 0.1 সেকেন্ড পর্যন্ত এর অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে রয়ে যায়।
দুটি চোখ থাকার সুবিধাঃ
দুটি চোখে দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হয়। এবং এই বিম্বগুলোর উপরিপাতনের ফলে বস্তুকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়।
আশা করি আজকে আপনাদের চোখের গঠন ও কাজ সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা দিতে পেরেছি।
One comment
Pingback: SRFamulus - বৃক্ক বিকল হওয়ার কারন,লক্ষন ও প্রতিকার
Pingback: প্লাস্টিড কাকে বলে? প্লাস্টিডের গঠন ও কাজ কি? - SRFamulus