হ্যাকিং কি? হ্যাকিং কতো প্রকার ও কি কি? হ্যাকার কে?

আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেল টিতে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো যে- হ্যাকিং কি এবং এটি কতো প্রকার ও কি কি।  এবং যে হ্যাক করে বা হ্যাকার কারা তাদের নিয়েও বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করছি শেষ পর্যন্ত লিখাটি পড়বেন।

আমাদের বর্তমান যুগ নিতান্তই প্রযুক্তি নির্ভর। আমরা আমাদের কাজকর্ম, চলাফেরা সকল কিছুকে সহজ করার উদ্দেশ্যে খুব বেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এতে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে ঠিকি তবে কিছু অসাধু চক্রের পাল্লায় পড়ে নানান ধরনের ক্ষতিও সাধিত হচ্ছে।

হ্যাকিং কি?

হ্যাকিং মূলত এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে তথ্য উপাত্ত বা ফাইল চুরি করা বা পরিবর্তন করার জন্য কেউ কোনোরকম বৈধ অনুমতি ছাড়াই কোন কম্পিউটার যেটিকে হ্যাক করবে বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে।

সাধারণত  যারা এই হ্যাকিং কার্যটি সম্পন্ন করে তারা হচ্ছে হ্যাকার। অর্থ্যাৎ তাদেরকেই হ্যাকার বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আমরা যারা সাধারন ও স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ তারা এই  হ্যাকিং বলতেই শুধু কোন ওয়েবসাইট  বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করাকেই বুঝি।  আমার আজকের এই আর্টিকেল টি শুধু মাত্র সেসকল মানুষদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সহজ ও সাবলীল ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

তাহলে আমরা যে ভাবছি হ্যাকিং মানেই শুধু ওয়েবসাইট ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কে হ্যাক করা। সত্যিই কি তাই?  না হ্যাকিং শুধু তাই নয়।

হ্যাকিং বিভিন্ন ধরণের হতে পারে যেমন- মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, গাড়ি ট্র্যাকিং, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বৈধ অনুমতি ছাড়া অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করলে তা হ্যাকিং এর আওতায় পড়বে।

হ্যাকিং এর প্রকারভেদ কি কি?

এটি প্রধানত দুই প্রকার। যেমন:

১।  ইথিক্যাল এবং

২। আনইথিক্যাল হ্যাকিং।

১। ইথিক্যাল হ্যাকিং:

“ইথিক্যাল” এই শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো- নৈতিক।

অর্থাৎ ইথিক্যাল এই এটির দ্বারা ভালো কাজকে বোঝায়। সাধারণত হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারের কাজকে ইথিক্যাল হ্যাকিং বলা হয়।

মূলত এই হ্যাকার রা হ্যাক করে ভালো কোনো উদ্দেশ্যে যা কোনো সিস্টেমের ত্রুটি খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।

এইভাবেই এসব ত্রুটি সমাধান করে কোনো একটি সিস্টেমকে খারাপ হ্যাকার থেকে রক্ষা করা যায়।

তাছাড়া এই ইথিক্যাল হ্যাকিং টার্ম তৈরির মূল উদ্দেশ্য  হ্যাকিংকে ভালো কাজে লাগানো।

ইথিক্যাল হ্যাকিং এ যারা হ্যাকার তারা টাকার বিনিময়ে অথবা কোনো কোম্পানিতে সরাসরি কর্মচারী হিসেবে হ্যাকিং করে থাকে।

তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক কে হ্যাক করে সেটিকে টেস্ট করা।

২। আনইথিক্যাল হ্যাকিং:

হ্যাকিংয়ের জগতে  অনৈতিক এবং ক্ষতিকারক কাজ যারা করে তাদের আনইথিক্যাল হ্যাকার বলা হয়ে থাকে।

তাদের করা কাজ গুলোকে বলা হয় আনইথিক্যাল হ্যাকিং।

সাধারণত  ইথিক্যাল এ যেমন সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ককে রক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হ্যাক করা হয় আনইথিক্যাল হ্যাকিং এ তার উল্টো টা হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে দেখা যায় হ্যাকার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নিয়েই হ্যাক করে। সারাবিশ্ব জুড়ে আনইথিক্যাল হ্যাকিংকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়। কারণ তারা তাদের মেধাকে খারাপ কাজে লাগায় এবং মানুষকে নানান বিপদে ফেলে এবং হয়রানির শিকার করে।

তবে ইথিক্যাল এবং আনইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের বাইরেও আরও কিছু প্রকারভেদ আছে। সেগুলো হলো-

১।  সার্ভার হ্যকিং,

২। ওয়েবসাইট হ্যকিং,

৩। কম্পিউটার হ্যকিং,

৪। নেটওয়ার্ক হ্যকিং,

৫। পাসওয়ার্ড হ্যকিং

৬। ই – মেইল হ্যকিং ইত্যাদি।

সার্ভার বা ওয়েবসাইট হ্যাকিং কি?

ওয়েবসাইট বা সার্ভার হ্যাকিং বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয় এবং প্রায় সকলের পরিচিত। বিশেষ করে ওয়ার্ডপ্রেসে তৈরি করা অনেক ওয়েবসাইটের হ্যাক হওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে।

এছাড়াও অনেক দেশের সরকারী ওয়েবসাইট গুলো প্রায়ই সাইবার ওয়্যারের আউতায় হ্যাকের শিকার হয়। ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট সহ বড় বড় ওয়েবসাইট এবং সার্ভার গুলো প্রায় সময় হ্যাকিং এর শিকার হয়ে থাকে।

পাসওয়ার্ড হ্যাকিং কি?

কোন একটি অ্যাকাউন্টে যদি আমরা ডিরেক্ট অ্যাক্সেস নিতে চাই তাহলে আমাদের পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট, ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সহ অন্যান্য অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য পাসওয়ার্ড হ্যাক অনেক জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। পাসওয়ার্ড হ্যাক করার জন্য হ্যাকাররা নিত্য নতুন অনেক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১।  কিলগার,

২। ফিশিং,

৩। ব্রাউজার কুকি এবং

৪। সেশন চুরি ইত্যাদি।   

ডার্ক ওয়েবে এ সকল লগইন ডাটাগুলো অনেক উচ্চ দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। যারা এসব পাসওয়ার্ড ক্রয় করে তারা এগুলো ইউজ করে ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং মোটা অংকের টাকা দাবি করে। তাছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করে টার্গেটের সব টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্র্যান্সফার করে নেয়। পাসওয়ার্ড হ্যাকিং একটি ভয়ংকর পদ্ধতি যা অনেক বেশি মাত্রার ক্ষতিকর একটি পদ্ধতি।

নেটওয়ার্ক হ্যাকিং কী?

নেটওয়ার্ক হ্যাকিং বলতে বুঝায় নেটওয়ার্ক কে হ্যাক করা। যেমন-  কোন একটি  কোম্পানি বা সরকারি কোনো অফিসে কাজের সুবিধার জন্য  অনেকগুলো কম্পিউটার থাকে এবং এই প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত থাকে ওই  লোকাল এরিয়ার নেটওয়ার্ক  কে হ্যাক করা হচ্ছে নেটওয়ার্কিং হ্যাকিং।

এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক এর উপরে হ্যাকাররা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তবে এই নেটওয়ার্ক কে হ্যাক করার জন্য মূলত অনেক ধরনের টুলস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার হ্যাকিং কী?

এই ধরনের হ্যাকিং এর অর্থ হল হ্যাকাররা কম্পিউটার সিস্টেমকে হ্যাক করে কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা, তথ্য,  ইনফরমেশন চুরি করে নেয় বা নষ্ট করে দেয়। হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার , ভাইরাসের মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমকে  হ্যাক করে।

ই-মেইল হ্যাকিং কি?

এখন প্রায়ই শুনা যায় যে ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হয়েছে। যেমন কিছুদিন আগেই জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম “সময় টিভি”  এর ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেল টিকে হ্যাক করা হয়েছে। তো এই কাজটি মূলত ই-মেইল হ্যাকিং এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। কারোর ইমেইল হ্যাক করে মেইল চুরি করা বা নষ্ট করে দেওয়ার নাম হচ্ছে ই-মেইল হ্যাকিং। হ্যাকাররা ইমেইল হ্যাক করে ওই ইমেইল পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে নেয় এবং উক্ত ইমেইলের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দেয় যাতে কেউ আর সেই ইমেইল এ প্রবেশ করতে না পারে।

প্রতিরোধ করার উপায় কী?

প্রতিরোধ-

১। যেকোন অপরিচিত সফটওয়্যার ডাউনলোড করা বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এমনকি সেটা যদি আপনার খুব কাছের বন্ধু বা পরিচিত কেও বলে তবুও তা থেকে বিরত থাকবেন। আপনার যদি সেটা খুবই প্রয়োজন হয় তাহলে সফটওয়্যার সম্পর্কে নেটে সার্চ দিয়ে ভালো করে তা সম্পর্কে জেনে নিন।

২। ই-মেইল এর মাধ্যমে  পাওয়া লিঙ্ক দিয়ে কোথাও লগইন করা উচিত না।

৩। পাসওয়ার্ড সবসময় ৮ ডিজিটের বেশি এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড (অক্ষর, সংখ্যা, ক্যাপিটাল লেটার, স্মল লেটার ইত্যাদি) মিলিয়ে মিশিয়ে দেওয়া বেশি সুরক্ষিত।

৪। অপরিচিত কোন ওয়েবসাইট লগইন করা উচিত না।

৫। অনুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা উত্তম।

৬। কখনোই  নিজের লগইন তথ্য শেয়ার করা যাবে না।

হ্যাকার (hacker) কাকে বলে?

হ্যাকার হলো সেই ব্যাক্তি যে কিনা তার দক্ষতা ও জ্ঞান দিয়ে অন্যান্য কম্পিউটার সিস্টেম গুলোর মধ্যে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে সকল প্রয়োজনীয় ডাটা, ফাইল, উপাত্ত, ইনফরমেশন গুলো চুরি বা নিজের আয়ত্তে করে নেয় তাকে হ্যাকার বলে।

হ্যাকারের ধরণ

সাধারণত হ্যাকার তিন প্রকার হতে পারে। যথা-

১। হোয়াইট  হ্যাট হ্যাকার( hat hacker)

২। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার (Black hat hacker)  

৩। গ্রে হ্যাট হ্যাকার( hat hacker)

১। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার:

হ্যাকিং এর মাধ্যমে ভালো কাজ করা হ্যাকারদের white hat hacker বলে।

২। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার:

যেসকল হ্যাকাররা খারাপ কাজ করার উদ্দেশ্যে হ্যাকিং করে তাদেরকে black hat hacker বলে।

৩। গ্রে হ্যাট হ্যাকার:

যে হ্যাকার ভালো কাজ এবং খারাপ কাজ দুই ধরনের কাজ গুলো করে থাকে তাদেরকে grey hat hacker বলে।।

About Atiq Shahriar

Check Also

জীববিজ্ঞানের শাখা

জীববিজ্ঞানের শাখা কয়টি ও কি কি?

আজকে আমরা জানবো জীববিজ্ঞানের শাখা কয়টি ও কি কি । আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেল এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *